হাসপাতালে বাড়ছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু
Source: Medivoice
Posted: 24 Dec, 2022
শীতকালে শিশুদের হালকা গরম পানিতে গোসল করানো, গরম কাপড় পরিধান ও পায়ে মোজা পরানো প্রয়োজন।
আলী হোসাইন: শীতের শুরু থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে শিশুর নিউমোনিয়া, পেটের ব্যাথা ও ব্রংকাইটিস রোগ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়াজনিত কারণে বেড়েছে শিশুদের এসব রোগের প্রকোপ। আতঙ্কিত না হয়ে অভিভাবকদের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নভেম্বরের শুরু থেকেই হাসপাতালে বাড়তে থাকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত ৭ দিনে সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে ৬ হাজার ৬০০ জন, জরুরি বিভাগ থেকে ৬৩২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বেশিরভাগই শিশু এবং বয়স্ক রোগী। এ সময় হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছে ৩৯৩ জন, এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই শিশু রোগী। বর্তমানে হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য থাকা ১৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ৩৪ জন শিশু রোগী। আজকেও ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া নিয়ে ১৮ জন শিশু ভর্তি হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সপ্তাহজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণের বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। শুধু আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই গত সাত দিনে পাঁচ শতাধিক শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। অতিরিক্ত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশীম খাচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আজমল হক মেডিভয়েসকে বলেন, শীতকালে বাতাসে ধুলা-বালি বেশি থাকে। বাতাসে উড়া-বেড়ানো জীবানু ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি করে। এ সময় বাতাস দূষিত হওয়ার কারণে শিশুদের শ্বাসনালী আক্রান্ত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত সপ্তাহ প্রতিদিন প্রায় ৯০ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। হাসপাতালে আসা এসব শিশুদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। শতকরা আশি ভাগ শিশুই সর্দি-কাশি নিউমোনিয়া নিয়ে আসছে। বাকি ২০ শতাংশ ডায়রিয়া নিয়ে আসছে। এ ছাড়া এসময় বয়স্করাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত রোগীর কারণে স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে ডা. আজমল বলেন, ‘একজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে এতো রোগী দেখা খুবই কষ্টকর। রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া যাচ্ছে না। পাঁচ দশমিনিট সময় না দিলে তারা সন্তুষ্ট হয় না। তারা মনে করে সেবার মান ভালো না, কিন্তু আমারাতো দুই মিনিটের বেশি সময় দিতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, জ্বর-সর্দি, কাশি শুধু ঠান্ডার কারণে হয় না। এসব রোগ একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায়। পরিবারে কেউ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য অসুস্থ ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলেদা রাখতে হবে। ধুলা-বালিতে সর্দি-কাশি বেশি হয়। এ্যজমা রোগীদের প্রধান শত্রু হচ্ছে ধুলা-বালি। এজন্য মাস্ক পরিধান করা জরুরি। আমরা যেসমস্ত শীত বস্ত্র ব্যবহার করি, অনেক সময় সেগুলোতে প্রচুর ধুলা থাকে। বিশেষ করে কম্বলে ধুলাবালি বেশি থাকে। এগুলো সারারাত ধরে শ্বাসনালিতে ঢুকে। শীতে ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় ও কম্বল পরিস্কার রাখা প্রয়োজন।
যেসব শিশু দুধ পান করে তাদের সুস্থ থাকার জন্য মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশু এবং মাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কিশোরদেরও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বাহিরের খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রমজান আলী মেডিভয়েসকে বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। সিটের অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়া আক্রান্তই বেশি। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কাজ করছি। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও সরবরাহকৃত ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই বলেও জানান তিনি।
অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের যেন ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই শিশুদের বাড়ির মেঝেতে শোয়ানো যাবে না। প্রতিদিন শিশুদের হালকা গরম পানিতে গোসল করাতে হবে। গরম কাপড় পরিধান করা, শিশুদের পায়ে মোজা পরানো, কাপড়-চোপড় রোদে শুকানো, পরিস্কার করা ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় না রাখা। ছয় মাসের শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ব্যতীত বাহিরের খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন ডা. রমজান আলী।